মাসুদুল হাসান মাসুদ, ভূঞাপুর (টাংগাইল) প্রতিনিধি:
স্বপ্ন থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে এখন বাংলাদেশ। স্বপ্নের যমুনা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে সম্ভাবনার নতুন এ দ্বার উন্মোচন হলো। উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের ৩টি বিভাগের প্রবেশ দ্বার খ্যাত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর যমুনা নদীর ওপর নির্মিত আধুনিক ও দেশের সর্ববৃহৎ রেলসেতু উদ্বোধন করলেন রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সভাপতিতে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের (জাইকা) ডিরেক্টর জেনারেল মি. ইতো তেরুয়ুকি, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান। বক্তব্য রাখেন, কলসালট্যান্ট মার হেভি, মি. সেনজিকাই, প্রজেক্ট ডিরেকটর মাসুদুর রহমান প্রমুখ।
এ রেলসেতু নির্মাণের ফলে কম সময়ের মধ্যে পণ্য সামগ্রী কম খরচে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো সম্ভব হবে। এ সেতু বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের প্রমত্ত্বা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতুতে রয়েছে ডাবল ট্র্যাক ও দুই পাশে দুটি অত্যাধুনিক স্টেশন এবং ডেকের নিচে রয়েছে গ্যাস পাইপ লাইন ও বিদ্যুৎ লাইন যা উত্তর বঙ্গের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তবে দুই প্রান্তের সিঙ্গেল ট্র্যাকের কারণে এই আধুনিক সেতুর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে না। তাই দুই প্রান্তে ডাবল ট্র্যাকের কথা জানিয়েছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। ৫ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে রেলসেতু উদ্বোধন করা হয়। সেদিন ২০ কিমি. থেকে ১২০ কিমি. গতিতে ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উদ্বোধনের পর ১২টা ৯ মিনিটে উদ্বোধনী ট্রেনটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ইব্রাহিমা বাদ রেলস্টেশন থেকে পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদ রেল স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ১২টা ২৩ মিনিটে সায়দাবাদ স্টেশনে থামে। সেখানে সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা ১টার সময় টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। মাত্র ৩ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে মূল রেলসেতুটি পার হয় উদ্বোধনী ট্রেন। এই রেলসেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন ১২০ কিমি. গতিতে সেতু পারাপার হবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেচে যাবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের ১ বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
যমুনা রেলসেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের ৭ হাজারেরও বেশি কর্মীর টানা ৪ বছরের পরিশ্রমে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেতুতে ৫০টি পিলার, প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার হলেও দুদিকে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।