পাবনা প্রতিনিধি:

পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় ২৫০টি কারখানায় অবাধে তৈরি হচ্ছে অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল। প্রকাশ্যে পরিবহনসহ ধুমছে চলছে বাজারজাতকরণ। ছোটখাটো অভিযান পরিচালনা হলেও স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধে প্রশাসনকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এসব জাল ছড়িয়ে পড়ায় বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ২৫০টির মতো বড় আকৃতির জাল তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার জাল তৈরি করে চলন বিলাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকার সহস্রাধিক বাড়িতেও জাল তৈরির সরঞ্জাম রয়েছে। এসব কারখানায় প্রচুর পরিমাণে তৈরি হচ্ছে অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল।
কারখানা মালিক জয়দেব হলদার বলেন, আমাদের তৈরিকৃত জাল সারা বাংলাদেশে যায়। আমার কারখানায় ২০ জন লোক চায়না দুয়ারি জাল তৈরির কাজ করে। কারখানা চালানোয় আমাদের তেমন সমস্যা হয় না। আমাদের সমিতির সভাপতিকে জিজ্ঞেস করেন বিস্তারিত বলতে পারবে।
তবে চেষ্টা করেও চায়না দুয়ারি জাল তৈরি মালিক সমিতির সভাপতি সুশান্ত হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুজিত কুমার মুন্সি জানান, প্রশাসনের সহায়তায় এসব কারখানা বন্ধে মাঝে মাঝেই অভিযান পরিচালিত হয়। গত সপ্তাহেও একটি অভিযানে আমরা ১৬ লাখ টাকার জাল পুড়িয়েছি। এরমাঝেও আরেকটি অভিযানে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এতেও সবগুলো কারখানা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের কারো সঙ্গে কারখানা মালিকদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এসব কারখানা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কিন্তু এত অল্প জনবল নিয়ে সেটি সম্ভব হয় না। তাছাড়া কারখানার কিছু কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা আদালতে একটি রিট করেছেন। সেটি বিবেচনায় রেখেও যতটুকু সম্ভব আমরা মাঝে মাঝেই অভিযান চালাচ্ছি।
পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ জাল উৎপাদনের সুযোগ নেই। আমি ইউএনওকে বলে দিচ্ছি, অভিযান চালিয়ে এসব বন্ধ করা হবে।
মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন ১৯৫০ এর মতে, চায়না দুয়ারি জাল তৈরি, সংরক্ষণ, আমদানি-রপ্তানি, বাজারজাতকরণ ও বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে চলছে এ জাল তৈরি, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ ও বহন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য চায়না দুয়ারি জাল কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর। এ জাল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে মাছ আটকে রাখতে সক্ষম। জালের বুননে এক গিঁট থেকে আরেক গিঁটের দূরত্ব খুব কম হওয়ায় মাছ বা অন্য কোনো ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী একবার এ জালের মধ্যে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। অন্য জালের চেয়ে কম পরিশ্রমে চায়না দুয়ারি জালে অধিক পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় বলে মৎস্য শিকারিরা এ জাল ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ শিকার করছেন অবাধে। এতে করে দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। দেখা দিচ্ছে সংকট। তাই দ্রুতই এসব অবৈধ জাল উৎপাদন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ সচেতন মহলের।